Short Description
প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধি গুণাগুণের জন্য সরিষার তেল আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সবার পছন্দের সরিষার তেল যেমন প্রয়োজনীয় তেমন উপকারীও। শরীর এবং ত্বকের উপকারে নানাভাবে কাজে লাগে সুবাসিত এই তেলটি।
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত সরিষার তেল ব্যবহার করে রান্না করা খাবার খেলে শরীরের একাধিক উপকার হয়। বাড়ে আয়ুও। চিকিৎসকদের মতে, সরিষার তেলে আস্থা রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। নিয়মিত সরিষার তেল মাখলে অনেক জটিল সমস্যার মোকাবিলা করতে পারবেন।
সরিষার তেলে রয়েছে ১৯২৭ ক্যালরি। এক কাপ তেলে চর্বি থাকে ২১৮ গ্রাম। সরিষার তেলে আছে প্রোটিন, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ওমেগা, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং পরিমাণমতো ভিটামিন এ। জেনে নিন সরিষার তেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা-
হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা হ্রাস পায়
একাধিক গবেষণায় একটা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, নিয়মিত সরিষার তেল খেলে হার্টের কোনো ক্ষতি হয় না। বরং হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বাড়ে। সেই সঙ্গে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও হ্রাস পায়। গবেষণায় দেখা গেছে সরিষার তেলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা খারাপ কোলস্টেরলের মাত্রা কমানোর মধ্যে দিয়ে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। সেই সঙ্গে শরীরের প্রতিটি কোণায় যাতে ঠিক মতো রক্ত পৌঁছে যেতে পারে সেদিকেও খেয়াল রাখে।
ক্যানসারের ঝুঁকি কমে
গবেষণায় দেখা গেছে সরিষার তেলে উপস্থিত লাইনোলেনিক অ্যাসিড আমাদের শরীরে ক্যানসার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। ফলে ক্যানসারের মতো মারণ ব্যাধি ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। বিশেষত স্টমাক এবং কোলন ক্যানসারকে দূরে রাখতে এই তেলটির কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে।
স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
সরিষার তেলে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর ফ্যাট স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে মনোযোগ বৃদ্ধি এবং সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতার উন্নতিতেও সাহায্য করে।
শরীরের প্রদাহ কমায়
সরিষার তেলে উপস্থিত অ্যান্টি-ইমফ্লেমেটারি উপাদান যে কোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষত মাথা যন্ত্রণা এবং তলপেটের অস্বস্তি কমাতে এই প্রাকৃতিক উপাদানটি দারুণ কাজে আসে। জ্বর-ঠান্ডা-কাশিতে আরাম পেতে হালকা গরম সরিষার তেলে কালোজিরা মিশিয়ে বুকে-পিঠে মাখুন, উপকার পাবেন।
ত্বকের যত্নে কার্যকর
অল্প সরিষার তেল হাতের তালুতে ঘষে মুখে লাগিয়ে নিন, সূর্যের ক্ষতিকারক আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করবে। সরিষার তেল অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদানে ভরপুর, অ্যালার্জি ও র্যাশ প্রতিরোধ করে। ত্বকের শুষ্কতা ও চুলকানি রুখতেও সরিষার তেল কার্যকরী। ত্বকে ডার্ক স্পট, ট্যান বা পিগমেন্টেশন ঠেকাতে বেসন, দই, লেবুর রস আর সরিষার তেল মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন, তার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সরিষার তেল ও নারিকেল তেল মিশিয়ে ১০ মিনিট ত্বকে মাসাজ করুন, ত্বক নরম, উজ্জ্বল থাকবে।
মাইগ্রেনের কষ্ট কমায়
মাইগ্রেনের কষ্ট কমাতে ম্যাগনেসিয়াম দারুণ কাজে আসে। আর যেমনটা ইতিমধ্যেই আপনারা জেনে গেছেন যে সরিষার তেলে এই খনিজটি বিপুল পরিমাণে থাকে। তাই এমন তেলে রান্না করা খাবার খেলে মাইগ্রেনের কষ্ট একেবারে কমে যায়। প্রসঙ্গত, সরিষার তেলে ভাজা মাছ খেলে শরীরে ওমাগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে অনেক ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
হাড়ের ব্যথা থেকে মুক্তি
শরীরে হাড়ের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করতে পারেন সরিষার তেল। সরিষার তেল আর আদা এই দুটোতে এমন উপাদান থাকে যা প্রদাহজনিত উৎসেচকের ক্রিয়ার গতি কমিয়ে দেয়। ফলে ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়। জয়েন্টের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে সরিষার তেলে পরিমাণ মতো কর্পূর মেশান। তেলটা গরম করে ঠান্ডা হতে দিন। এবার সেই তেল মালিশ করুন। আরাম পাবেন।
ওজন কমায়
সরিষার তেল ওমেগা -৩, ওমেগা -৬ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং স্বাস্থ্যকর চর্বিগুলির একটি দুর্দান্ত উত্স। স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিডে কেবল খাবারের স্বাদই উন্নত করে না, রক্তে চর্বির মাত্রাও হ্রাস করে। যেখানে ওমেগা -৬ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রাকৃতিকভাবে শরীরে সঞ্চিত বাদামী চর্বি ব্যবহারকে সক্রিয় করতে পারে। সরিষার তেল ওজন কমাতে ভাল ভূমিকা পালন করে।